দেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই-তৃতীয়াংশ সরকারি বা বেসরকারি কোনো আথিক সহায়তা পাচ্ছে না। বিভিন্ন পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপের কথা বলা হলেও দক্ষ শিক্ষকের সঙ্কট, শিক্ষা উপকরণে ঘাটতি ছাড়াও আবাসন সঙ্কট রয়েই গেছে। শিক্ষা পরবর্তী সময়ে হাতে কলমে শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত শিল্প-কারখানার সাথে সংযোগ নেই অনেক প্রতিষ্ঠানের। এমনই পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে জাতীয় পর্যায়ে এক জরিপ প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এনএসডিসি) যৌথভাবে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (টিভিইটি) প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক অবস্থা তুলে ধরতে এই জরিপটি প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে।
দেশে-বিদেশে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার কারিগরি শিক্ষা প্রদানে গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এজন্য দেশের সার্বিক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত পরিস্থিতি জানতে এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জায়গা স্বল্পতা, শিক্ষক সঙ্কট, ল্যাব সঙ্কট- এতদিন খণ্ড চিত্র পাওয়া গেলেও এ ধরনের প্রতিবেদনের ফলে এর সঠিক চিত্রটি উঠে এসেছে। জরিপকালে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ উল্লেখ করেছে ল্যাব ওয়ার্কশপে প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। ৮ দশমিক ৪ ভাগ জানিয়েছে যে তাদের দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে-বিদেশের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা দেশিয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেক্টরে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শনে সক্ষম হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই (৭৪.৫%) সরকার বা বেসরকারি কোনো এনজিও থেকে সহায়তা পাচ্ছে না। মাত্র ২৫ দশমিক ৫ ভাগ প্রতিষ্ঠান সরকার বা কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা পাচ্ছে। দেশের মাত্র ৮ দশমিক ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান শীক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা দিতে পারে। বৃহত্ অংশ ৮৪ দশমিক ৪ ভাগ আবাসন সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে।
২০১৫ সালের মাঝামাঝি দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি নিয়ে জরিপকালীন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপকালীন সময়ে একটি বড় অংশ ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ আর্থিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করেছে। ১৫ দশমিক ৪ ভাগ উল্লেখ করেছে তাদের প্রশিক্ষণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। ১০ দশমিক ৩ ভাগ জানিয়েছে তাদের স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতির কথা জানালেও এর উল্টো চিত্রও রয়েছে। ৭ দশমিক ২ ভাগ জানিয়েছে তাদের শিক্ষার্থী সঙ্কট রয়েছে। বিদ্যুৎ সঙ্কটের কথা উল্লেখ করেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সাড়ে ৬ ভাগ জানিয়েছে তাদের শিক্ষা পরবর্তী সময়ে হাতে-কলমে শিখার জন্য শিল্প কারখানার সাথে সংযোগ নেই।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে দেশ স্বাধীনের আগে এই প্রতিষ্ঠান ছিল ১২৫১টি। বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ১৬৩টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৯০১টি (৪৪.৮%) প্রতিষ্ঠান গ্রামকেন্দ্রিক এবং বাকি ৭২৬২ (৫৫.২%) শহরকেন্দ্রিক।
বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, কারিগরি জ্ঞান অর্জন করার পর সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা যাতে দ্রুত চাকরি পায় তাও নিশ্চিত করা দরকার। বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে আগামীতে বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান আরো সঙ্কুচিত হতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদনে কিছু ভিন্ন চিত্রও উঠে এসেছে। মোট প্রতিষ্ঠানের ৩১ ভাগই ঢাকা কেন্দ্রিক। রাজশাহীতে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ, রংপুরে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, খুলনাতে ১১ দশমিক ১ শতাংশ এবং বরিশালে ৬ শতাংশ ও সিলেটে ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
জরিপে উঠে এসেছে দেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানের ৪৮ ভাগই ব্যক্তি মালিকানাধীন। এমপিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৫১৭ (১৯.১%), সরকারি ও আধা সরকারি রয়েছে ১৭৩১টি (১৩.২%)। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে ২৩টি ও অন্যান্য বিভাগ ও সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান।
News Link as Ref: http://www.ittefaq.com.bd/trade/2017/01/22/100654.html